Thursday, February 5, 2015

গীতাকবচ

(স্বামী জগদীশ্বরানন্দ)*

শ্রীশ্রীচণ্ডীর যেমন কবচ আছে, গীতারও তদ্রূপ কবচ আছে । যেমন দেবীকবচ পাঠান্তে চণ্ডীপাঠ বিহিত, সেইরূপ গীতাকবচ পাঠান্তে গীতাপাঠ করিতে হয় । বার্ণেল সাহেবের ক্যাটালগ (১১৪৬নং, ১৮৬ পৃষ্ঠা) অনুসারে তাঞ্জোরের মহারাজা সরফৌজির সরস্বতীমহল গ্রন্থাগারে তেলেগু অক্ষরে লিখিত পুঁথিতে একটি গীতাকবচ আছে ('শ্রীভারতী' পত্রিকায় - ২য় বর্ষ, ৭ম সংখ্যা - শ্রীজিতেন্দ্রনাথ বসু কর্তৃক প্রকাশিত) ।

যাহা ধারণ করিলে শত্রু-নিক্ষিপ্ত অস্ত্রশস্ত্রাদি হইতে আত্মরক্ষা করা যায়, তাহাকে কবচ বলে । যিনি গীতাতত্ত্বে প্রবেশ করিতে অগ্রসর হন, তাঁহার বাহ্য ও আভ্যন্তরে নানা প্রবল শত্রু থাকে । ইহাদের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্য গীতাকবচ অবশ্য ধারণীয় । গীতাকবচে ষড়ঙ্গ রক্ষা করিবার বিধি ও কৌশল বিশেষভাবে উল্লিখিত আছে । উক্ত কবচের বৈশিষ্ট এই যে, ইহাতে গীতার ছয়টি মূল শ্লোক উল্লিখিত ।@

- স্বামী জগদীশ্বরানন্দ
উদ্বোধন কার্যালয়, কলিকাতা


গীতাকবচ - বঙ্গানুবাদ#


এই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় :- 
ঋষি - ভগবান বেদব্যাস;
ছন্দ - অনুষ্টুপ;
পরমাত্মা দেবতা - বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ;
গীতার বীজ - "যাঁহাদের জন্য শোক করা উচিত নয়, তাঁহাদিগের জন্য তুমি শোক করিতেছ, অথচ প্রাজ্ঞের মতো কথা বলিতেছ " (Chapter#2, verse#11);
গীতার শক্তি - "সকল ধর্মাধর্মের অনুষ্ঠান পরিত্যাগপূর্বক গর্ভ, জন্ম, জরা ও মৃত্যুবর্জিত পরমেশ্বররূপ একমাত্র আমার শরণাগত হও" (Ch#18, vs#66);
গীতার কীলক (বন্ধনী) - "...সকল ধর্মাধর্ম বন্ধনরূপ পাপ হইতে তোমাকে মুক্ত করিব । অতএব, শোক করিও না ।" (Ch#18, vs#66);
গীতার কবচ - "আমাতে চিত্ত অর্পণ করিলে আমার অনুগ্রহে তুমি দুস্তর সংসার ও তাহার কারণসমূহ অতিক্রম করিবে ।" (Ch#18, vs#58)

ভগবান শ্রীগোপালকৃষ্ণ বাসুদেবের প্রীতির জন্য কবচ জপ করিতেছি - এই রকম সঙ্কল্প করিবে ।

শ্রীমজ্‌ জ্ঞানাত্মনে শ্রীকৃষ্ণায় অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ ।
জ্ঞানস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম জানাই, এই বলিয়া উভয় তর্জনী দ্বারা হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করিবে ।

শ্রীমদৈশ্বর্যাত্মনে বৈশ্বানরায় তর্জনীভ্যাং স্বাহা ।
ঐশ্বর্যস্বরূপ বৈশ্বানরের (অগ্নিদেবের) উদ্দেশ্যে দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা সেই সেই হস্তের তর্জনীদ্বয় স্পর্শ করিবে ।

শ্রীবাসুদেবায় মধ্যমাভ্যাং বষট্‌ ।
শ্রীবাসুদেবের উদ্দেশ্যে দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা সেই সেই হস্তের মধ্যমাদ্বয় স্পর্শ করিবে ।

শ্রীমদ্বলাত্মনে বলভদ্রায় অনামিকাভ্যাং হুম্‌ ।
বলস্বরূপ বলভদ্রের উদ্দেশ্যে এই মন্ত্র উচ্চারণের সাথে দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা সেই সেই হস্তের অনামিকাদ্বয় স্পর্শ করিবে ।

শ্রীমত্তৈজসাত্মনে শ্রীকৃষ্ণায় কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্‌ ।
তেজস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে দুই বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা সেই সেই হস্তের কনিষ্ঠাদ্বয় স্পর্শ করিবে ।

শ্রীমদ্বিজয়াত্মনে গাণ্ডীবধন্বিনে শ্রীমদর্জুনায় করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্‌ ।
বিজয়স্বরূপ গাণ্ডীবধন্বা অর্জুনের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ করতল দ্বারা বাম করতল বেষ্টনপূর্বক বাম করতলের উপর দক্ষিণ করতল দ্বারা আঘাত করিবে ।

ইতি করন্যাসঃ । - এইভাবে করন্যাস করিতে হইবে ।

ইত্থং হৃদয়ায় নমঃ - এই মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও অন্যান্য অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে ।

শিরসে স্বাহা - এই মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক দক্ষিণ তর্জনী-মধ্যমাগ্র দ্বারা শিরোদেশ স্পর্শ করিবে ।

শিখায়ৈ বষট্‌ - এই মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক অঙ্গুষ্ঠাগ্র দ্বারা শিখা স্পর্শ করিবে ।

কবচায় হুম্‌ - এই মন্ত্র পাঠ করে যথাক্রমে দক্ষিণ করাঙ্গুলি সমূহ দ্বারা বাম বাহুমূল ও বাম করাঙ্গুলি সমূহ দ্বারা দক্ষিণ বাহুমূল স্পর্শ করিবে ।

নেত্রত্রয়ায় বৌষট্‌ - এই মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক দক্ষিণ হস্তের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা দ্বারা বাম ও দক্ষিণ নেত্র এবং নাসামূল স্পর্শ করিবে ।

করতলপৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট্‌ - এই মন্ত্র পাঠ করিয়া দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বামকরতল বেষ্টনপূর্বক বামকরতলে আঘাত করিবে ।

ইতি অঙ্গন্যাসঃ । - এইভাবে অঙ্গন্যাস করিতে হইবে ।

পাণ্ডবগণ যে গীতার শ্লোক সমূহ শুনতে ইচ্ছা করেন সেই গীতার দেবতা ছয়টি শ্লোকের দ্বারা স্তুত হন - এতে কোন সন্দেহ নাই ।

"ওঁ নমো নারায়ণায়" এই বলিয়া করশুদ্ধি করিয়া, মণিবন্ধে, প্রকোষ্ঠে, কূর্পরে, হস্ততলে, করাগ্রে, করপৃষ্ঠে স্পর্শ করিতে হইবে ।
 

'ওম' এই মূলমন্ত্রে তিনবার প্রাণায়াম বা রেচক করিয়া -
'একাক্ষর ব্রহ্মনাম ওঁ উচ্চারণপূর্বক তাঁহার অর্থরূপ আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যিনি দেহত্যাগ করেন তিনি পরমাগতি (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন' । ১ 
(Ch#8, vs#13)

'তিনি (পরব্রহ্ম) সমগ্র বিশ্বকে ব্যাপ্ত করিয়া বিরাজিত আছেন । সকল শরীরের হস্ত ও পদ, চক্ষু ও কর্ণ, মস্তক ও মুখ তাঁহার হস্ত ও পদ, চক্ষু ও কর্ণ এবং মস্তক ও মুখ'
 । ২ (Ch#13, vs#14)

ইতি হৃদয়ায় নমঃ । শ্রীমদৈশ্বরাত্মনে ছন্দসে শিরসে স্বাহা ।
বাসুদেবের উদ্দেশ্যে বক্ষদেশে প্রণাম, মস্তকে প্রণাম ।

'হে হৃষিকেশ, আপনার মাহাত্ম্যকীর্তনে সমস্ত জগৎ প্রহৃষ্ট ও আপনার প্রতি অনুরক্ত হয় । কারণ আপনি সর্বাত্মা ও সর্বভূতের সুহৃৎ । রাক্ষসগণ ভীত হইয়া নানাদিকে পলায়ন করিতেছে এবং সিদ্ধগণ আপনাকে নমস্কার করিতেছেন । এই সমস্তই যুক্তিযুক্ত' 
।৩ (Ch#11, vs#36)

শ্রীমচ্ছক্ত্যাত্মনে শ্রীবেদব্যাসায় শিখায়ৈ বষট্‌ ।
শক্তিস্বরূপ বেদব্যাসের উদ্দেশ্যে শিখায় প্রণতি জানাই ।


'পুরাণস্বরূপ মহাভারত রচয়িতা এই কবিকে' -

                           অথবা
'যিনি সর্বজ্ঞ (কবিং), সনাতন, বিশ্বনিয়ন্তা এবং সূক্ষ হইতেও সূক্ষ; যিনি অচিন্ত্যস্বরূপ, সূর্যবৎ স্বপ্রকাশ ও জ্যোতির্ময় (আদিত্যবর্ণং); যিনি মোহান্ধকারের অতীত এবং সকলের কর্মফলদাতা, তাঁহাকে' - । ৪ (Ch#8, vs#9)
['যিনি মৃত্যুকালে ভক্তিযুক্ত হৃদয়ে ... স্মরণ করেন, তিনি সেই দিব্য পরম পুরুষকে প্রাপ্ত হন' । ৪ (Ch#8, vs#10)]

শ্রীমদ্বলাত্মনে বলভদ্ররামায় কবচায় হুম্‌ ।
বলস্বরূপ বলভদ্ররামের উদ্দেশ্যে "কবচায় হুম" মন্ত্রোচ্চারণ করিতে হইবে ।


'যে জ্যোতিঃ সূর্যে, চন্দ্রে ও অগ্নিতে আছে এবং যাহা সমগ্র জগৎকে প্রকাশ করে, সেই জ্যোতিঃ আমার জানিবে' । ৫ 
(Ch#15, vs#12)

শ্রীমত্তৈজসাত্মনে শ্রীকৃষ্ণায় নেত্রত্রয়ায় বৌষট্‌ ।
তেজস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ হস্তের তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা দ্বারা বাম ও দক্ষিণ নেত্র এবং নাসামূল স্পর্শ করিবে ।


'এই সংসাররূপ মায়াময় বৃক্ষের মূল (কারণ) ঊর্দ্ধে, অর্থাৎ মায়াশক্তিবিশিষ্ট ব্রহ্মে; হিরণ্যগর্ভাদি শাখা নিম্ন দিকে ও কর্মকাণ্ডরূপ বেদসমূদয় ইহার পত্র । এই অনাদি সংসারকে বেদপুরাণাদি শাস্ত্র অশ্বত্থ বলিয়া থাকেন । যিনি এই প্রকার সংসার বৃক্ষকে জানেন, তিনিই বেদজ্ঞ' । ৬ 
(Ch#15, vs#1)

শ্রীমদ্বিজয়াত্মনে গাণ্ডীবধন্বিনে শ্রীমদর্জুনায় অস্ত্রায় ফট্‌ ।
বিজয়স্বরূপ গাণ্ডীবধন্বা অর্জুনের উদ্দেশ্যে বাম করতলের উপর দক্ষিণ করতল দ্বারা আঘাত করিবে ।

ওঁ ভূভুর্বঃ স্বরোমিতি দিগ্বন্ধঃ ।। 

এই মন্ত্র পাঠ করিয়া দিক বন্ধ করিবে ।
 

শ্রীভগবদ্গীতাকবচ সমাপ্ত ।

শ্রীকৃষ্ণায়ার্পণমস্তু ।
এই গীতা পাঠের ফল শ্রীকৃষ্ণের চরণে অর্পণ করা হইল ।

_________________________________________
মণিবন্ধ = কবজি (wrist)
প্রকোষ্ঠ = কনুই থেকে কবজি অবধি হাতের অংশ (fore-arm)
বাহুমূল = বগল (armpit)
কূর্পর = হাঁটু (knee)

@List of Gita verses mentioned in Gita Armour
  • Ch#02, vs#11 (line 1) - Seed of Gita
  • Ch#18, vs#66 (line 1) - Power of Gita 
  • Ch#18, vs#66 (line 2) - Bolt of Gita
  • Ch#18, vs#58 (line 1) - Armour of Gita
  1. Ch#08, vs#13 - Pandava's favourite
  2. Ch#13, vs#14 - Pandava's favourite 
  3. Ch#11, vs#36 - Pandava's favourite 
  4. Ch#08, vs#09 - Pandava's favourite (should be read along with Ch#08, vs#10)
  5. Ch#15, vs#12 - Pandava's favourite 
  6. Ch#15, vs#01 - Pandava's favourite
_________________________________________
#Partly translated by Mrs. Chabi Pal, Krishnanagar, West Bengal, India as Bengali translation is not provided in the original Udbodhan publication.

*Hard Copy Source:
"Srimadbhagabadgeeta" translated by Swami Jagadeeshwarananda, edited by Swami Jagadananda. 27th Reprint - January, 1997 (1st Edition - 1941), © President, Sriramkrishna Math, Belur. Published by Swami Satyabrotananda, Udbodhan Office, 1 Udbodhan Lane, Bagbazar, Kolkata-700003. Printed by Rama Art Press, 6/30 Dum Dum Road, Kolkata-700030.

Sanskrit Source
English Translation

Disclaimer: This site is not officially related to Ramakrishna Mission & Math. এটি এক অর্বাচীন ভক্তের প্রয়াস মাত্র 

[Digitised by scanning (if required) and then by typing mostly in Notepad using Unicode Bengali "Siyam Rupali" font and Avro Phonetic Keyboard for transliteration. Uploaded by rk]


<Previous--Contents--Next>

No comments:

Post a Comment